আমাদের বাসার সবচেয়ে প্রিয় রুমটি হয়ে থাকে আমাদের বেডরুম। বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার ইচ্ছা কমবেশি প্রত্যেকেরই থাকে। সহজেই বেডরুম ইন্টারিয়র ডিজাইন করার জন্য এই আইডিয়াগুলো খুবই কার্যকরি।
চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে সাজাবেন আপনার বেডরুম:
পেইন্টিং আইডিয়া
বেডরুম ওয়াল পেইন্টিং আইডিয়াঃ
বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে, প্রথমেই শুরু করা যাক বেডরুম ওয়াল পেইন্টিং দিয়ে। বেডরুমের দেয়ালের রঙ কেমন হবে এটা অনেকটা নির্ভর করে রুমের পরিমাপ এবং অবস্থানের উপর। আপনার বেডরুমটি যদি ছোট হয়, তবে ব্যবহার করতে পারেন হালকা রঙ যেমনঃ সাদা, হালকা নীল, হালকা মিষ্টি কিংবা যেকোনো হালকা রঙ। শুধুমাত্র রুম বড় হলেই গাঢ় রঙ ব্যবহার করতে পারেন। কেননা, হালকা রঙ্গে রুম একটু বড় দেখাবে, অন্যদিকে গাঢ় রঙ রুমের পরিমাপ নির্দিষ্ট করতে ভূমিকা রাখে।
আপনি চাইলে রঙে ভিন্নতা আনতে পারেন। দেয়ালে ছবির ফ্রেম টানালে অবশ্যই দেয়ালে কিছুটা কম রঙ্গিন গাড় রঙ ব্যবহার করতে পারেন। শিশুদের বেডরুম সাজানো চাই রঙ্গিন করে। এজন্য মাল্টি কালার কিংবা বিভিন্ন আঁকাআঁকি দিয়ে সাজাতে পারেন। দেয়াল অবশ্যই কালারফুল হতে হবে যেন দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। খেয়াল রাখতে হবে এমন কিছু যেন না রাখা হয় যা আপনার শিশু পছন্দ করেনা।

বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন
বেডরুমের সিলিং ডিজাইন আইডিয়াঃ
বেডরুমের সিলিং ডেকোরেট করতে পারেন নানাভাবে। প্লেইন পারটেক্স বোর্ড কিংবা ভিনিয়ার বোর্ডের মাধ্যমে সিলিং ডিজাইন করলে আপনার বেডরুমের সৌন্দর্য বেড়ে যাবে বহুগুণে। এছাড়াও একটু কম বাজেটে বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে চাইলে সিলিং ডিজাইনে ব্যবহার করতে পারেন জিপসাপ সিলিং। জিপসাম সিলিং ব্যবহারে স্বল্প খরচে খুবই আকর্ষণীয়ভাবে আপনার রুম সাজানো সম্ভব। আপনার বাসার যদি ছাদ না থাকে তবে সিলিং এ অবশ্যই ফোম শীট লেয়ার রাখবেন যা আপনার রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। অথবা বাজেট একটু বেশি হলে প্লেইন পারটেক্স বা ভিনিয়ার ব্যবহার করতে পারেন।
বেড ডিজাইনঃ
বেড ডিজাইনে আধুনিকতার ছোঁয়ার মাধ্যমে গুণগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি রুচিশীলতা বজায় রেখে বেডরুম ডিজাইন করতে পারেন। স্লিম ডিজাইনের বেড এবং লাইট কালার বেডশীট ব্যবহার করতে পারেন আপনার বেড সাজাতে। এছাড়াও আপনি যদি রঙ্গিন করে সাজাতে চান তাহলে বেড হেডে রঙ্গিন ফেব্রিকস লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে পছন্দ মতো প্রতি বছর পরিবর্তন করতে পারেন এতে আরো নতুন মনে হবে বেডটি।
এরপর বালিশ এর ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় বালিশের সংখ্যা। বালিশের সংখ্যা নির্ভর করে আপনার চাহিদা এবং বেড সাইজের উপর। সাধারণত ২-৪ টি বালিশ রাখাই ভালো। এক্ষেত্রে অবশ্যই বেডশীট ও বালিশের কভারের কালার একই রাখা উচিত। চাইলে বেড এর নিচের অংশ থেকে কিছুটা বেশি অংশ জুড়ে কার্পেট রাখতে পারেন, যা একইসাথে সৌন্দর্য বাড়াবে পাশাপাশি বেড কম ময়লা হবে। পাশে সাইড টেবিল রাখতে পারেন। আধুনিক অনেক বেডেই এখন সাইড টেবিল সংযুক্ত থাকে। যেখানে আপনি চাইলে আপনার প্রয়োজনীয় কিছু রাখতে পারবেন।

বেডরুম লাইটিং আইডিয়াঃ
বেডরুম লাইটিং এ প্রথমেই ভাবতে হয় উজ্জ্বল আলোকিত করা উচিত নাকি মৃদু আলোকসজ্জা করা উচিত? বেশিরভাগ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মতে বেডরুম কম/মৃদু আলোকিত করা উচিত। কেননা, বেডরুমে অতি আলোকসজ্জা নিদ্রাহীনতার কারণ হতে পারে। বেডের দুই পাশে হ্যাংগিং লাইট ব্যবহার করতে পারেন। ফলে দেখতে যেমন সুন্দর হয় তেমনি আলাদা করে টেবিলল্যাম্প ব্যবহার করার প্রয়োজন হবেনা। বেডের সরাসরি উপরে উজ্জ্বল আলো ব্যবহার না করাই ভালো তবু ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করা যেতে পারে সিম্পল ডিজাইনের হ্যাংগিং লাইট/ঝাড়বাতি। এতে আপনার বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন খুব সহজেই করতে পারবেন।
এছাড়াও সিলিং এবং কর্ণার এ ব্যবহার করা যেতে পারে স্ট্রীপ লাইট। স্ট্রীপ লাইট বিভিন্ন কালারফুল হলেও মৃদু ওয়ার্ম কালার ব্যবহার করতে পারেন। ফোকাস লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে সিলিং এর বিভিন্ন অংশে। যে একটি নির্দিষ্ট রেডিয়াসে কিছুটা বেশি আলোর যোগান দিবে। বেডটাইম বই পড়তে বেডের উপর ফোকাস লাইট লাগানো যেতে পারে। বেডরুমের একপাশে যদি কম্পিউটার টেবিল রাখা হয় সেক্ষেত্রে উপরে ফোকাস লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
উডেন ফ্লোর ডিজাইন
ফ্লোর ডিজাইনঃ
বাসার ফ্লোরে সাধারণত আমরা টাইলস ব্যবহার করে থাকি। নান্দনিক ডিজাইনের টাইলস এর পাশাপাশি আমরা ব্যবহার করতে পারি বাহারি ডিজাইনের কার্পেট কিংবা উডেন ফ্লোর বা কাঠের মেঝে। এক্ষেত্রে আপনার বেডরুমটির ইন্টারিয়র এর সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। ফলে রুমের তাপমাত্রা যেমন ঠিক থাকবে তেমনি মেঝে বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিবে।
বেডরুম ফার্নিচার
বেডরুম ফার্নিচারঃ
ফার্ণিচার হচ্ছে একটি বাসার সবচেয়ে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কেননা অতিথি থেকে শুরু করে পরিবারের সকল সদস্যবৃন্দ ফার্ণিচারেই বেশি সময় কাটান। টেলিভিশন দেখা থেকে শুরু করে ডাইনিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল সোফা, চেয়ার, কেভিনেট, ওয়্যারডোব সকল কিছুই ফার্ণিচার। বেডরুমের জন্য ফার্ণিচার গুলো হতে পারেঃ সুন্দর পরিপাটি গোছানো বিছানা, পাশে সাইড টেবিল,বিছানার সামনেই বসার জন্য কম উচ্চতার লম্বা আই সাইজ সোফা, পাশে চেয়ার কিংবা ১-২টি একক সোফা রাখা যেতে পারে রুমের জায়গা অনেক বেশি হলে। রুমের এক কোণে চাইলে কম্পিউটার টেবিল রাখতে পারেন।
এছাড়াও একটি ওয়াল কেবিনেট করা যেতে পারে একপাশের দেয়ালজুড়ে। মিরর পেস্টিং দেয়ালও করতে পারেন ছোট রুমের ক্ষেত্রে। বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইনে মিরর পেস্টিং করলে রুম আরও বড় দেখাবে। জানালা দিয়ে আলো প্রবেশ করে এমন জায়গায় চাইলে গাছের ১-২টা টব রাখতে পারেন যা একইসাথে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে তেমনি মন/ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। বেডরুম ফার্ণিচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেনো কিছুটা ফাঁকা রাখা যায় বেডরুমের জায়গা। কেননা স্বল্প জায়গায় বেশি ফার্ণিচার রাখলে তা সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

বেডরুম সাজানোর সহজ উপায়
বেডরুম সাজানোর সহজ হ্যাকসঃ
বেডরুম সহজে সাজাতে হলে দেয়ালে ছবি কিংবা 3D ওয়াল স্টিকার বা প্রিন্ট করাতে পারেন। দেয়ালের রঙ করানো না থাকলে ওয়ালপেপারও লাগানো যেতে পারে। নান্দনিক আর্ট কিংবা ফটো ফ্রেম দেয়ালে টানানো যেতে পারে। এতে দেয়ালের সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিজেদের স্মৃতিও দেয়ালে জায়গা পাবে। যা দেখে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন কিংবা ঘুম থেকে উঠে দেখলেই মন ভালো হয়ে যাবে। কাজের অনুপ্রেরণা পাবেন। সঠিক বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করলে প্রতিদিন নিজের মধ্যে আলাদা একটা উদ্দীপনা কাজ করবে। কাজের গতি বেড়ে যাবে। বই পড়ার অভ্যাস থাকলে বিছানার পেছনের ওয়ালে বই রাখার জন্য ছোট ওয়াল কেবিনেট রাখা যেতে পারে। বেডরুমে যতটা সম্ভব একটু ফাঁকা রেখে সকল কিছু ডেকোরেশন করা উচিত। ডিজাইন অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু বেডরুমে না রাখায় ভালো।
ফ্যান নাকি এসি?
ফ্যান নাকি এসি, কোনটি ব্যবহার করা উচিতঃ
এক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে বাসার অবস্থান ও তাপমাত্রা। আপনার বাসার চারপাশে যদি পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ, গাছপালা, আলো-বাতাস থাকে তবে ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু শহরে এই সুযোগ না থাকায় সম্ভব হলে এসি ব্যবহার করায় ভালো। যদিও বেশিরভাগ এসি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও এসি ব্যবহার করলে থাই গ্লাস ব্যবহার করা হয়। যদি আপনার বাজেট বেশি থাকে তবে এসি ব্যবহার করতে পারেন। ফ্যানের পরিবর্তে এসি ব্যবহার করা হলে জায়গা কম লাগবে এবং বেডরুমের ইন্টেরিয়র ডিজাইন আরও আকর্ষণীয় হবে। সেক্ষেত্রে চাইলে সিলিং এ স্লিম ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে রুমের জায়গার সঠিক ব্যবহার করা যাবে এবং যথেষ্ট জায়গা বাকি থাকবে যা খুবই প্রয়োজনীয়।
১। কিভাবে বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করবো?
বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের নিজেদের চাহিদা বিবেচনা করতে হবে। বিনা প্রয়োজনে বেডরুমে যেকোনো কিছু না রাখায় ভালো। তাই, প্রয়োজন অনুযায়ী বেডরুমের ফার্ণিচার থেকে শুরু করে সকল কিছু সাজানো উচিত। বেডরুমে যতটা সম্ভব ফাঁকা জায়গা রাখলে সাজাতে সুবিধা হয়।
২। কোন কাঠের ফার্ণিচার সবচেয়ে ভালো?
ফার্বিচারের জন্য সবচেয়ে ভালো কাঠ সেগুন। সেগুন কাঠের ফার্ণিচার যেমন মজবুত তেমনি দেখতেও সুন্দর। এই কাঠে একটি টেকচার ফুটে ওঠে। যা দেখতে খুবই ভালো। কিন্তু সেক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেড়ে যাবে। আপনি চাইলে আধুনিক বোর্ড দিয়ে তৈরি নানা রকম ফার্ণিচারগুলোও ব্যবহার করতে পারেন। ডিজাইনে সুন্দর এবং যত্নে ব্যবহার করলে টিকেও অনেক বেশিদিন।
৩। বেডরুমের দেয়ালে কি রং করবো?
বেডরুমের যেহেতু ঘুমানোর জায়গা, তাই বেডরুমে হালকা কালার ব্যবহার করা উচিত। বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে অতি উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল বং ব্যবহার করা যেতে পারে। বেডরুমের দেয়ালের রং অনুযায়ী বেড শীট/বালিশ কভার ব্যবহার করতে পারেন।
৪। বেডরুম সাজানোর সহজ উপায় কি?
এক্ষেত্রে আপনি চাইলে কোনো সুন্দর গাছের টব রাখতে পারেন বেডরুমের একপাশে এবং ফরম্যাটিং টা গুরুতবপূর্ণ। কোথায় বেড রাখবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার বেডরুম কতটা গুছানো। তাই আপনার রুমের অবস্থান অনুযায়ী আমাদের আর্টিকেল থেকে ধারণা নিয়ে মনের মতো করে আপনার বেডরুম ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতে বা সাজাতে পারেন আপনার বেডরুমটি।
আমাদের ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পর্কে জানতে এখনই যোগাযোগ করুনঃ
Mobile:- +880 1700-719-000
Email:- info@outbuildbd.com